রেজাউল হাবিব রেজা ঃ
করিমগঞ্জ ইতিহাস ওইতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি কিশোরগঞ্জ জেলার হীরা বলে খ্যাত এই ইলিয়াস কাঞ্চনকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল তার জন্মভুমির মাটি করিমগঞ্জে। তার নামধাম শুনেও ওপেন তাকে কেউ দেখতে পারেনি বলে ২০০৪সালের ২৫শে এপ্রিল হাজার হাজার মানুষ ভীড় করছিলো তার অভ্যর্থনা তথা ইতিহাস সম্মেলনে।
সেদিনই কিশোরগঞ্জ জেলায় সর্বপ্রথম বড় একটি রেলি বের করা হয় “নিরাপদ সড়ক চাই” শ্লোগানে। করিমগঞ্জের মানুষ সেদিন আবেগে উচ্চসিত হয়েছিলো তাদের মাটির এই সন্তানকে দেখে। এদিন উপস্থিত হয়েছিলেন করিমগঞ্জের আরেক আলোকিত মানুষ বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ,টাঙ্গাইলের প্রখ্যাত ফকলোর ড. আশরাফ সিদ্দিকী। যদিও স্থানীয় সাংবাদিকরা এসব আলোকিত মানুষদেরকে “সমাগম বাড়াতে” শিরোনামে হৈ-হুল্লোড়ের অনুষ্ঠান বলে প্রচার করেছিল। আমি রেজাউল হাবিব রেজা সঞ্চালনায় থেকে ও সংগঠনের সভাপতি শেখ আবুল মুনসুর লুনুর সভাপতিত্বে এক প্রতিকূল অবস্থায় তা সমাপ্ত করতে হয়েছিল।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, সাপ্তাহিক আলোরমেলা পত্রিকার সম্পাদক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, দৈনিক শতাব্দীর কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ উল্লাহ ও ইতিহাস গবেষক আশরাফুল ইসলামসহ কিশোরগঞ্জ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সেই সম্মেলন থেকে প্রেরণা লাভ করেছিলেন তখন নতুন ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুরা। তৈরি হয়েছে অনেক নতুন লেখক। যার প্রেরণার উৎসস্থল চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনসহ উল্লেখিত আলোকিত মানুষগুলো। এবার চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছে শুনে কিশোরগঞ্জের মানুষ অতিশয় আনন্দিত। ইলিয়াস কাঞ্চন তার আগে একুশে পদকেও ভূষিত হয়েছেন।
একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি। এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন এই অভিনেতা।
ব্যবসাসফল সিনেমার কথা বললে আগে আসে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমার নাম। এ সিনেমার নায়ক হিসেবে ছোট-বড় সব বয়সী দর্শকদের মন জয় করেছিলেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘বেদের মেয়ে জোছনা একটি ব্যবসাসফল সিনেমা। একইসঙ্গে দারুণ দর্শকপ্রিয়।’
সামাজিক সিনেমার নায়ক হিসেবে সফলতা পাওয়া এই অভিনেতা রোমান্টিক সিনেমার নায়ক হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছেন। তার অভিনীত ‘ভেজা চোখ’ সিনেমাটি রোমান্টিক সিনেমা হিসেবে টিকে থাকবে অনেকদিন। ‘সহযাত্রী’ সিনেমাটিও সফল একটি প্রেমের সিনেমা।
সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক ইলিয়াস কাঞ্চনের। এখনো অভিনয়ে সরব তিনি। সর্বশেষ অভিনয় করেছেন নায়িকা রোজিনা পরিচালিত ‘ফিরে দেখা’ সিনেমায়। এটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। ৩ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
নায়ক রাজ্জাকের পরিচালনায়ও কাজ করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ সিনেমায় তার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। নায়ক উজ্জ্বল পরিচালিত ‘নালিশ’ সিনেমায় তার অভিনয় দারুণ সাড়া ফেলে। ডুমুরের ফুল, কলমীলতা, দয়ামায়া, তিন কন্যা, বিষ কন্যার প্রেম, তওবা, ইনসাফ, সহযাত্রী, চাকর, গাড়িয়াল ভাই, গোলাপি এখন ঢাকায়, অচল পয়সা… এমন অনেক সিনেমা তার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে।
অন্যদিকে তার প্রতিষ্ঠিত “নিরাপদ সড়ক চাই” সংগঠনটি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত একটি সংগঠন। এই সংগঠন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংগঠন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সারাজীবন এই কাজটি করে যেতে চাই। মানুষের কল্যাণ বড় বিষয়। আমি সবসময় মানুষের কথা বিবেচনা করি। দেশের কথা ও দেশের মানুষের কথা ভাবি। সেভাবেই কাজ করে যাব।’
আজীবন সম্মাননা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কাজ করে যাব আজীবন। এটাতো আজীবনের জন্য দেওয়া হয়। শিল্পী সারাজীবন অভিনয় করতে পারেন। এককথায় বলব, “ভালো লাগা কাজ করছে।”
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো অপূর্ণতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো ফুরিয়ে যাইনি, এখনো কাজ করছি মানুষের জন্য, শিল্পের জন্য। কোনো অপূর্ণতা নেই। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি শিল্পী জীবনে।’
তিনি বিগত চলচ্ছিত্র সমিতির নির্বাচনে সভাপতি হিসেবেও ভোটারদের অকুন্ঠ সমর্থনে বিজয়ী হয়েছিলেন। আমরা চাই এই চলচ্ছিত্র অভিনেতা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুক আমাদের মাঝে।
Leave a Reply